দেবিদ্বারে এমপি কালামের অবস্থান সুসংহত
কুমিল্লার দেবিদ্বারে রাজনৈতিক অবস্থান তৈরি করেছেন শিল্পপতি আবুল কালাম। তার পরিবারে তিনজনই এখন জনপ্রতিনিধি।
দেবীদ্বার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আনারস প্রতীকের প্রার্থী ও যুবলীগ নেতা মো. মামুনুর রশিদ বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তৃতীয় ধাপে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ সাধারণ নির্বাচনে বিপুল ভোটে তিনি বিজয়ী হন। প্রতিদ্বন্দ্বী দুই চেয়ারম্যান প্রার্থী শাহিদা আক্তার ও খাদিজা বিনতে রোশনকে (মা-মেয়ে) পরাজিত করেন তিনি।
মামুনুরের বড় ভাই আবুল কালাম আজাদ কুমিল্লা-৪ (দেবীদ্বার) আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য এবং কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। তাঁর বাবা মো. নুরুল ইসলাম দেবীদ্বার উপজেলার বরকামতা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) টানা দুই মেয়াদের আওয়ামী লীগ দলীয় চেয়ারম্যান। ভাই সংসদ সদস্য (এমপি), বাবা ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর এবার ছোট ভাইকে উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে পেয়েছেন দেবীদ্বারবাসী।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, নব্বইয়ের দশকে দেবীদ্বারের বরকামতা ইউপির একটি ওয়ার্ডের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন নুরুল ইসলাম। ২০১৬ সালের আগস্টে তিনি বরকামতা ইউপির চেয়ারম্যান হন। এর মধ্যে ২০২১ সালে দেবীদ্বার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে তাঁর ছেলে আবুল কালাম আজাদ চেয়ারম্যান হন। ২০২২ সালে নৌকা প্রতীক নিয়ে দ্বিতীয় দফায় ইউপি চেয়ারম্যান হন নুরুল ইসলাম। ২০২৩ সালের ২০ নভেম্বর উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ ছেড়ে সংসদ নির্বাচন করে সংসদ সদস্য হন আবুল কালাম আজাদ। তাঁর ভাই মামুনুর রশিদ দেবীদ্বার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। গত চার বছরে নুরুল ইসলামের পরিবার থেকে প্রথমে ইউপি চেয়ারম্যান, তারপর সংসদ সদস্য এবং এবার উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেন।
দেবিদ্বারের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন যাবত দুই মুন্সী পরিবারের আধিপত্য ছিল। মঞ্জুরুল আহসান মুন্সী বিএনপি’র রাজনীতিতে আর ফখরুল ইসলাম মুন্সী আওয়ামী রাজনীতিতে একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল। এই দুই পরিবারের বাহিরে বর্তমানে অবস্থান নিয়েছে আবুল কালামের পরিবার। চারদিকে জয়জয়কার। কোনঠাসা হয়ে পড়েছে মুন্সী পরিবার। মুন্সী পরিবার ছাড়াও দেবিদ্বারের রাজনীতিতে হঠাৎ আগমন ঘটেছিল উত্তর জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক রোশন আলী মাস্টারের। তাঁর স্ত্রীও এবার নির্বাচনে পরাজিত হন।
ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমার চার ছেলে ও তিন মেয়ে। ছেলেদের মধ্যে আজাদ দ্বিতীয় ও মামুন তৃতীয়। ছেলেরা বড় হওয়ার আগেই আমি মেম্বার হই। তৃণমূল থেকে রাজনীতি করি। আজাদ ঢাকায় ব্যবসা করে। এরপর রাজনীতিতে সক্রিয় হয়। মামুনও রাজনীতি করে। উপজেলা যুবলীগের সদস্য। ওরা মানুষের কল্যাণে কাজ করে। মানুষকে সব সময় সাহায্য করে। দেবীদ্বারের মানুষের সঙ্গে ওদের যোগাযোগ বেশি। এ জন্য প্রত্যাশিত ফল পেয়েছে।’
সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ বলেন, দেবীদ্বারের মানুষ বছরের পর বছর উন্নয়নবঞ্চিত ছিলেন। আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা নির্যাতিত ছিলেন। তাঁদের পক্ষে দাঁড়িয়েছে তাঁর পরিবার। মানুষের চাপে মামুনকে প্রার্থী করিয়েছেন। মামুন জয়ীও হয়েছে। সব ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচারের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছেন দেবীদ্বারবাসী।
নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান মামুনুর রশিদ বলেন, ‘সবার মতামত নিয়ে দেবীদ্বারকে স্মার্ট উপজেলা হিসেবে গড়ে তুলব। আমার বাবা, বড় ভাই, পরিবার, দেবীদ্বারের বিভিন্ন ইউপির চেয়ারম্যান, মেম্বার, আওয়ামী লীগ, যুবলীগসহ সর্বস্তরের নেতা–কর্মীদের কাছে আমি ঋণী।’
দেবীদ্বারে চেয়ারম্যান পদে দুই পরিবারের তিনজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তাঁরা হলেন আনারস প্রতীকের প্রার্থী মো. মামুনুর রশিদ, ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী শাহিদা আক্তার ও দোয়াত-কলম প্রতীকের প্রার্থী খাদিজা বিনতে রোশন। মামুনুরের প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য দুজন সম্পর্কে মা–মেয়ে। শাহিদা কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রোশন আলীর স্ত্রী এবং খাদিজা মেয়ে।