বুড়িচং এ আলোচিত বাশার চেয়ারম্যান পরিবার
বুড়িচং উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মরহুম আবুল বাশার পরিবার এবার ছিলো আলোচনায়। আবুল বাশার ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী নেতা ছিলেন। যার বাড়িতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এসেছিলেন। যিনি সহচার্য পেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর। বর্তমানে তারই প্রথম সন্তান উপজেলা চেয়ারম্যান আখলাক হায়দার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। নানা কারনে এবার এই পরিবার আলোচিত ছিলো।
আখলাক হায়দার দুই বার ময়নামতি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি বর্তমানে উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক। ২০১৪ সালে উপজেলা পরিষদে তিনি চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করেছিলেন। ২০১৯ সালে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচন করে তিনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। ঐ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী আবুল হাশেম খানকে পরাজিত করেন। পরবর্তীতে আবুল হাশেম খান এমপি নির্বাচিত হন। তার ছোট ভাই লালন হায়দার ময়নামতি ইউনিয়নের ২ বারের চেয়ারম্যান আরেক ভাই তারেক হায়দার গত সেশনে জেলা পরিষদের সদস্য ছিলেন। তারা তিন ভাই একই সঙ্গে উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদের দায়িত্বে ছিলেন। গত ইউপি নির্বাচনে তাদের পরিবারের মাঝে নির্বাচন নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয়। সে নির্বাচনে ছোট ভাই লালনের স্থলে আখলাক পুত্র আদনান হায়দার নির্বাচন করতে চায়। পরবর্তীতে চাচা ভাতিজা নির্বাচনও করেন। এ নিয়ে পারিবারিক বিরোধ বেড়ে যায়। এ বিরোধের জেরে তারেক হায়দারও জেলা পরিষদ নির্বাচনে পরাজিত হন। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আখলাক হায়দার হঠাৎ করেই স্বতন্ত্র প্রার্থী এম এ জাহেরের পক্ষে অবস্থান নেন। সে সময় বুড়িচং-ব্রাহ্মনপাড়ায় আলোচিত ছিলো এ বিষয়টি। আখলাক হায়দার সরাসরি এম এ জাহেরের পক্ষে অবস্থান নেয়ায় এম এ জাহের এম পি নির্বাচিত হওয়ার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। অপরদিকে আখলাক হায়দারের দুই ভাই তারেক হায়দার ও লালন হায়দার অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী সাজ্জাদ হোসেনের পক্ষে অবস্থান নেন। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর উপজেলা নির্বাচনকে ঘিরে নানা তৎপরতা শুরু হয়। সাজ্জাদ হোসেন তারেক হায়দারকে তার প্রার্থী হিসেবে ঘোষনা দিয়ে মাঠে নামেন। অপরদিকে এমএ জাহের এমপি আখলাক হায়দারকে সমর্থন জানান। নানা কারনে এমপি জাহেরের ঘনিষ্ঠজনরা এমপি নির্বাচনের পর পরই বুড়িচং-এর সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বাছির খানকে সমর্থন দেন। বাছির খানও এমপি এম এ জাহেরের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করেন। বাছির খান জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের পক্ষে কাজ করেন। শেষ পর্যন্ত বাছির খান উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হন। জনশ্রুতি রয়েছে বাছির খানকে প্রার্থী করার পেছনে এবং তাকে সমর্থন দিয়েছেন এম এ জাহের। এ নিয়ে নানা কথা ছড়িয়ে পরে। একদিকে ঘরের নিজের ভাইকে নিয়ে প্রার্থী করানো অপরদিকে স্থানীয় সংসদ সদস্যের অবস্থানের বিষয়টি নিয়ে ঘাবড়ে যান আখলাক হায়দার। শেষ সময়ে এসে কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য হাজী আ.ক.ম বাহার উদ্দিন বাহার বিষয়টি নিজের হাতে তুলে নেন। এমপি বাহারের নির্দেশনায় কুমিল্লা সদর আসন থেকে বিপুল সংখ্যক নেতা কর্মী বুড়িচং-এ প্রেরণ করেন। স্থানীয় এমপির ভূমিকার বিষয়টি আখলাক সমর্থীত কয়েকজন নেতা সাংসদ বাহারকে অবহিত করেন বলে জানা যায়। শেষ মুহুর্তে হাজী বাহারের নির্দেশে এম এ জাহেরের ভাতিজা আবু সাইব বাপ্পি আখলাক হায়দারের নির্বাচনী জনসভায় বক্তব্য দেন। চারদিকের ষড়যন্ত্র আর মেরুকরণের ইঙ্গিত পান আখলাক পরিবারের অন্য সদস্যরাও। নির্বাচনের দিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের পরিবারের তিন ভাই একত্রিত হয়েছে বলে ব্যাপক প্রচার পায়। সূত্রটি জানায় তাদের তিন ভাইয়ের মধ্যে ঐক্য হয়েছে। শেষ পর্যন্ত আখলাক হায়দার বিজয়ী হয়েছেন। আলোচনা হচ্ছে তাদের পরিবারের বিষয়টি। নির্বাচনের পর সহঅবস্থান বিরাজ করছে।
ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তৃতীয় ধাপে বুড়িচং উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী বুড়িচং থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান বীরমুক্তিযোদ্ধা আখলাক হায়দার ৩৭ হাজার ৭৮৭ পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আনারস প্রতীকের ইঞ্জি. বাছির খান ২৫ হাজার ৪৫৩ ভোট পেয়েছেন।