জামায়াতের ঘাটিতে বিএনপি’র হানা

নিজস্ব প্রতিবেদক
১৯৯১ সাল চৌদ্দগ্রামে দুই হেভিওয়েট প্রার্থী একজন পদচ্যুত সরকারের প্রধানমন্ত্রী কাজী জাফর আহমেদ, অপরজন মুজিবুল হক মুজিব। তার মঝেই নবীন হিসেবে আবির্ভূত হন ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। তরুণ এই নেতা দৃষ্টি কাড়েন চৌদ্দগ্রামবাসীর। জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে তরুণ প্রজন্মের কাছে খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেন। চৌদ্দগ্রামের রাজনীতিতে ফ্যাক্টর হিসেবে আবির্ভূত হন ডা. তাহের। সে নির্বাচনে হুলিয়া মাথায় নিয়ে কাজী জাফরের স্ত্রী কন্যারা ভোটের মাঠে ছিলেন। মানবিক কারণেই সেই নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত বিজয়ী হন কাজী জাফর আহমেদ। তিনি ভোট পান ৩৫৮০৯। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের পান ২৫৪১৮ ভোট।
তারপর ১৯৯৬ সালের ১২ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে বিএনপি’র সামছুদ্দিন আহমেদ নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালের ১২ জুনের নির্বাচনে নির্বাচিত হন আওয়ামীলীগের মুজিবুল হক মুজিব। তিনি ৪৯৭৬৭ ভোট পান। দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের। তিনি পান ২৫৯৮৪ ভোট। অপর দিকে কাজী জাফর আহমেদ তৃতীয় স্থান অর্জন করেন। ১৯৯১ এবং ১৯৯৬ এর নির্বাচনে বিএনপি’র প্রার্থী জামানত হারান। তার পর থেকেই জামায়াত আওয়ামীলীগ মাঠ দখলের সংঘর্ষের রাজনীতিতে উত্তক্ত হয় চৌদ্দগ্রামের রাজনীতি। ২০০১ সালে নির্বাচনে চার দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের ১৮৪০০৭ ভোট পান। অপরদিকে মুজিবুল হক মুজিব পান ৫৪১৭২ ভোট। সে নির্বাচনে কাজী জাফর প্রার্থী ছিলেন না।
২০০৯ সালের নির্বাচনে আওয়ামীলীগের মুজিবুল হক মুজিব ১১২০০১ ভোট পান। অপরদিকে ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের বিএনপি জামায়াতের জোটের প্রার্থী হিসেবে ৭৭৯২৪ ভোট পান। সে নির্বাচনে কাজী জাফর আহমেদ পান ১২৯৮০ ভোট।
২০১৪ সালের বিনা ভোটের নির্বাচনে, ২০১৮ সালের রাতের ভোট আর ২০২৪ সালের ডামি নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হন মুজিবুল হক মুজিব। ২০১৪ ও ২০২৪ নির্বাচনে বিএনপি জামায়াত নির্বাচনে অংশ নেননি। ২০১৮ সালের নির্বাচনে জামায়াত প্রার্থী হিসেবে ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের ধানের শীষ প্রতিকে নির্বাচন করেন।
১৯৯১ সাল থেকে চৌদ্দগ্রামের রাজনীতিতে ডা. তাহেরের অবস্থান সুসংহত। ২০০৯ সালের পর থেকে জামায়াত অনেকটা কোণঠাসা হয়ে পড়ে জাতীয় রাজনীতির কারণে।
বিএনপি’র রাজনীতিতেও পরিবর্তন ঘটতে থাকে। পুরনো নেতারা কোণঠাসা হয়ে পড়ে। কামরুল হুদার কাছে। বিএনপি’র হাল ধরেন কামরুল হুদা। তিনি দলকে গুছাতে থাকেন। বিএনপি-জামায়াত জোটের প্রার্থী হিসেবে উপজেলা নির্বাচনেও অংশ নেন। তিনি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রায় ৪২ হাজার ভোট পান। ২০০৯ সালের পর আওয়ামীলীগ যতই শক্তিশালী হয় ততই দুর্বল হয় জামায়াত। অপরদিকে বিএনপি তৃতীয় সারির দল হিসেবে এগুতে থাকে। শুরুতে দলীয় কোন্দল থাকলেও এক পর্যায়ে কামরুল হুদার একক নিয়ন্ত্রণে আসে বিএনপি। আওয়ামীলীগও নিজেদের শক্ত প্রতিপক্ষ হিসেবে জামায়াতকে বিবেচনা করে। অপরদিকে বিএনপি’র কামরুল হুদা কৌশলে চৌদ্দগ্রামের মাঠ চষে বেড়ায়। জামায়াত নিরব হওয়ার কারণে কামরুল হুদা রাজনীতিতে বাড়তি সুবিধা পায়।
৫ আগস্টের পর প্রকাশ্যে আসে জামায়াত। অপরদিকে কামরুল হুদাও সর্বশক্তি নিয়োগ করে। জামায়াত মাঠে নেমেই বুঝতে পারে বিএনপি অনেক দূর এগিয়েছে। সেই দেখা থেকেই জামায়াতও হাটছে দ্রুত। আওয়ামীলীগ শূণ্য এলাকায় নিজেদের ঘাঁটিতে বিএনপি যে হানা এনেছে তা স্পষ্ট। অপরদিকে আওয়ামীলীগের রাজনৈতিক কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও মূলত আওয়ামীলীগের ভোট কোন দিকে যাচ্ছে সেটাই এখন দুই দলের ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিএনপি নেতা কমরুল হুদার সঙ্গে উত্তর চৌদ্দগ্রামের বেশ কয়েকটি আওয়ামী দলীয় নেতা এবং চেয়ারম্যানের সু-সম্পর্ক বিদ্যমান। যা ভোটের মাঠের আলোচনায় খোরাক যাগাচ্ছে। জামায়াতও শক্ত অবস্থান জানান দিচ্ছে। তবে দুই দলই আওয়ামীলীগের প্রতি সদয়। ভোটের রাজনীতির কারণে উভয় দলই আওয়ামীলীগের সাথে গোপনে সু-সম্পর্ক রাখছে। বিএনপি-জামায়াত উভয় দলই আওয়ামীলীগের নির্যাতন ভোগ করলেও তারা এখন সেটি নিয়ে কথা বলতে নারাজ।
বলাচলে উভয় দলই আওয়ামীলীগের সমর্থকদের কাছে টানতে চাচ্ছে। আওয়ামীলীগ যেন এখন উভয় দলের শ্বশুর বাড়ির আত্মীয়। মূল বিরোধ এখন বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে। বিএনপি ওয়ার্ড পর্যায়ে কমিটি গঠনের মাধ্যমে সু-সংগঠিত হওয়ার পাশাপাশি নির্বাচনী তৎপরতা চালাচ্ছে। অপরদিকে জামায়াত কেন্দ্র কমিটি, নেতাদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে। ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা হওয়া সত্বেও প্রতি সপ্তাহে এলাকায় আসছেন। মানুষের সাথে কথা বলছেন কর্মীদের দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন। অপরদিকে বসে নেই কামরুল হুদাও। চৌদ্দগ্রামের রাজনীতিতে কাজী জাফর পরিবার ও আওয়ামীলীগ অনেকটাই নিরব। মানুষ কথা বলছে না। দুই দলের নেতারা মাঠে থাকলেও অনেকটা নিরবতাই লক্ষ করা যাচ্ছে। চৌদ্দগ্রামের ভোটের মাঠে নিরবতাই যে কোরো জন্য আশির্বাদ কিংবা অভিশাপ হয়ে যেতে পারে।
জামায়াতের দূর্গে বিএনপি’র হানার আশংকা রয়েছে। তবে জামায়াতও তাদের দূর্গ ধরে রাখার জন্য তৎপরতা চালাচ্ছে।