আপনারে কে এখানে বসাইছে, আমি তাঁর কইলজা খুলিয়ালামু

কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. শামছুল ইসলাম এবং নাঙ্গলকোট উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও সাবেক স্থানীয় সংসদ সদস্য আব্দুল গফুর ভূঁইয়ার মুঠোফোনে কথোপকথনের একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। অডিওতে শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের উদ্দেশে আব্দুল গফুর ভূঁইয়াকে বলতে শোনা যায়, ‘আপনারে কে এখানে বসাইছে, আমি তাঁর কইলজা খুলিয়ালামু। আপনার কইলজাও খুলমু।’
আব্দুল গফুর ভূঁইয়া ২০০১ সালে কুমিল্লা-১১ আসনের (নাঙ্গলকোট) সংসদ সদস্য ছিলেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে নাঙ্গলকোটের সঙ্গে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ ও বর্তমান লালমাই উপজেলা নিয়ে কুমিল্লা-১০ আসন গঠিত হয়। মঙ্গলবার তাঁর কথোপকথনের অডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। অডিওটি প্রায় তিন মাস আগের বলে জানা গেছে।
দলীয় সূত্র জানিয়েছে, নাঙ্গলকোট উপজেলার ভোলাইন উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের সভাপতি পদ নিয়ে বোর্ড চেয়ারম্যানকে হুমকি দেন আব্দুল গফুর ভূঁইয়া। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির সভাপতির পদে আছেন আব্দুল গফুর।
তবে আব্দুল গফুর ভূঁইয়া দাবি করেছেন, এটি তাঁর কল রেকর্ড নয়। এডিট করে রেকর্ড প্রচার করা হয়েছে। এর পর থেকেই তাঁর মুঠোফোনটি বন্ধ। তবে মঙ্গলবার রাতে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলে কথোপকথনের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি বছরের ১৮ মে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার প্রেস উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দিন দিদারের বড় ভাই মীর আবু সালেহ শামসুদ্দীনকে ভোলাইন উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের সভাপতি হিসেবে সুপারিশ করেন কুমিল্লার জেলা প্রশাসক। পরে শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান তা প্রতিষ্ঠানপ্রধানের কাছে পাঠান। এর পরপরই আব্দুল গফুর ভূঁইয়া কল করে শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানকে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ ও নানা হুমকি দেন। ঘটনার পর চেয়ারম্যানের অনুরোধে মীর আবু সালেহ শামসুদ্দীন সভাপতি পদ থেকে অব্যাহতি নেন। এরপর আব্দুল গফুর ভূঁইয়া প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি হন।
ছড়িয়ে পড়া ১ মিনিট ৫২ সেকেন্ডের কল রেকর্ডে আব্দুল গফুর ভূঁইয়াকে উত্তেজিত অবস্থায় বলতে শোনা যায়, ‘মিডিয়া সেলের সদস্য এখন নাই, এখন নাই সে।’ এ সময় শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান বলেন, ‘সে আমার কাছে এসে পরিচয় দিয়েছে।’ এরপর গফুর ভূঁইয়া বলে ওঠেন, ‘পরিচয় দেক, পরিচয় দিলেও একজন সংসদ সদস্যকে আপনি অপমান করতে পারেন না। আমি আপনার অফিসে আসি, আপনাকে অপমান করব। আপনার কত বড় কইলজা হইছে, আমি দেখমু আপনারে। আপনারে কে এখানে বসাইছে, আমি তাঁর কইলজা খুলিয়ালামু। আপনার কইলজাও খুলমু। বেয়াদবির একটা সীমা আছে। একটা টোকাইর ইয়া নিয়েছেন আপনে। সে একজন কো-অর্ডিনেটর, সে চাকরি করে এখানে, টোকাই।’
এ সময় শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানকে বলতে শোনা যায়, ‘উনি পরিচয় দিয়েছেন আমাকে উনি খালেদা জিয়ার প্রেস…’। এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে গফুর ভূঁইয়া বলে ওঠেন, ‘ঠিক আছে, ঠিক আছে। আপনি আমাকে বলতেন যে এ রকম একটা তদবির আছে, ইয়া আছে, ওখানে তো সে ঢুকতে পারবে না। তার ভাই ঢুকতে পারবে না, আপনি ভেজাল লাগাইছেন। একজন ইয়া করি আপনি এটার দায়দায়িত্ব নিতে হবে। আমি কালকে আপনার বিরুদ্ধে মামলা করব। কত বড় সাহস আপনার, আমি দেখে নেব আপনাকে।…আপনাকে আমি বলছি আপনি এটা সুন্দরভাবে করেন, না হলে কিন্তু আপনার ক্ষতি হবে। আপনি অপমানিত হবেন। আমি আপনাকে দেখে নেব। আমি টোকাই না।’
জানতে চাইলে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. শামছুল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনাটি প্রায় তিন মাস আগের। আজকে কীভাবে কল রেকর্ডটি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে, আমি বলতে পারব না। এ ছাড়া এ নিয়ে আমি আর কোনো মন্তব্য করতে চাই না।’
কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জাকারিয়া তাহের বলেন, ‘আমি কল রেকর্ডটি শুনেছি কিছুটা। এটা দলীয় কোনো বিষয় না। বিষয়টি একান্তই গফুর ভূঁইয়ার ব্যক্তিগত। তবে বিষয়টি দুঃখজনক।’