ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেআলোচনায় জাহাঙ্গীর ও তাহের গ্রুপ
নিজস্ব রিপোর্ট:
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আলোচনায় জাহাঙ্গীর গ্রুপ ও তাহের গ্রুপ। নির্বাচনে কে হবে বিজয়ী এই নিয়ে আলোচনায় সরগরম। আলোচনায় মাঠে আছেন বিএনপি’র বহিস্কৃত প্রার্থী সরকার জহিরুল হক মিঠুনও। আওয়ামীলীগের গ্রুপিং দীর্ঘদিনের। একদিকে বর্তমান উপজেলা আওয়ামীলীগের আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর খান চৌধুরী ও অপরদিকে আলহাজ¦ মো. আবু তাহের গ্রুপ। আলহাজ¦ আবু তাহের ইন্তেকাল করলে তার ভাই বর্তমান এমপি এম.এ জাহের সে গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আবু তাহের ইন্তেকাল করলেও এখনও আলোচনায় তাহের গ্রুপ হিসেবেই তাদের নেতাকর্মীরা পরিচয় দিচ্ছেন। ২০১৯ সালে উপজেলা নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী জাহাঙ্গীর খান চৌধুরীকে পরাজিত করে নির্বাচিত হন আলহাজ¦ মো. আবু তাহের। সে নির্বাচনে স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন জাহাঙ্গীর খান চৌধুরী। সেই নির্বাচনে বিজয়ের মধ্যেমে তাহের গ্রুপ তাদের শক্তিমত্তা জানিয়ে দেন। নির্বাচনের পর সংগঠিত হতে থাকে তাহের গ্রুপ। মাদক, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজিসহ নানা ইস্যুতে সরব থাকা তাহের গ্রুপ ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠে। নির্বাচিত হওয়ার কয়েক বছর পর ইন্তেকাল করেন আলহাজ¦ আবু তাহের। তাঁর মৃত্যুর পর উপ নির্বাচনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তাঁর ছোট ভাই ব্যবসায়ী এম.এ জাহের। এম.এ জাহেরের সঙ্গে নৌকা নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেন জাহাঙ্গীর খান চৌধুরী। সে নির্বাচনেও পরাজিত হন জাহাঙ্গীর খান চৌধুরী। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এম.এ জাহের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন। সে নির্বাচনেও প্রার্থী হয়েছিলেন জাহাঙ্গীর খান চৌধুরী। এক পর্যায়ে জাহাঙ্গীর খান চৌধুরী নির্বাচন থেকে সরে পড়েন। তিনি নৌকাকে সমর্থন করার ঘোষণা করলেও মূলত এম.এ জাহেরকে ঠেকাতে তিনি অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী সাজ্জাদ হোসেনের পক্ষে অবস্থান নেন। নির্বাচনে এম.এ জাহের নির্বাচিত হন। পর পর তিন নির্বাচনে জাহাঙ্গীর খান চৌধুরী পরাজিত হন। এই পর্যায়ে উপজেলা নির্বাচনে জাহাঙ্গীর খান চৌধুরী নানা কৌশল নিয়ে এগুতে থাকেন। কৌশলের অংশ হিসেবে তাহের গ্রুপের প্রভাবশালী নেতা হাজী জসিম উদ্দিন জসিমকেও তিনি নিজের অনুকূলে নিয়ে নেন। তাকে প্রার্থীতা করার অফারও দেওয়া হয়। অপরদিকে ব্যারিস্টার সোহরাব খান চৌধুরীকেও মাঠে নামান জাহাঙ্গীর খান চৌধুরী। তারই অনুসারি উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম সুজনও প্রার্থী হন। একপর্যায়ে হাজী জসিম উদ্দিন তার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন। তিনি ফিরে যান পুরনো তাহের গ্রুপের শিবিরে। অপরদিকে আমিনুল ইসলাম সুজনের প্রার্থীতা প্রত্যাহার করেননি। তিনি আছেন নির্বাচনে মাঠে। জাহাঙ্গীর খান চৌধুরী ব্যারিস্টার সোহরাব খান চৌধুরীকে সমর্থন করায় হাজী জসিম এবং সুজন ক্ষুব্ধ হন। গত তিনটি নির্বাচনেই সরকার, নৌকা, স্থানীয় এমপিকে মোকাবেলা করেই তাহের সমর্থকরা বিজয়ী হয়েছিলেন। এবার তাদের গ্রুপের বর্তমান শীর্ষ নেতা এম.এ জাহের সংসদ সদস্য। প্রশাসন অনেকটা তাদের অনুকূলে। তাদের গ্রুপ অনেক আগেই আলহাজ¦ আবু তাহের পুত্র ও এম.এ জাহেরের ভাতিজা আবু তৈয়ব অপিকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করে মাঠ পর্যায়ে প্রচারণা চালাতে থাকে। জাতীয় নির্বাচনের পর জাহাঙ্গীর গ্রুপের অনেক নেতাই তাহের গ্রুপের সঙ্গে সম্পৃক্ত হচ্ছে। প্রতিদিনই নতুন নতুন নেতাকর্মী সম্পৃক্ত হচ্ছে অপির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে। গত নির্বাচনে এম.এ জাহেরের বিরোধীতা করেছেন এমন শতাধিক নেতাকর্মী এখন আবু তৈয়ব অপির পক্ষে প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন। এদের মধ্যে অনেক আলোচিত নেতাও আছেন। যারা তাহের গ্রুপের কট্টর বিরোধী হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
গত ৩টি নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতের অংশগ্রহণ ছিল না। ফলে তাদের ভোট তাহের গ্রুপের ব্যাংকেই জমা হয়েছে বলে অনেকে মনে করেন। মূলত নৌকা এবং আওয়ামীলীগকে ঠেকাতে বিএনপি জামায়াতের নেতাকর্মীরা তাহের গ্রুপকে বেছে নেন। এবার নির্বাচনে পর পর তিনবার পরাজিত জাহাঙ্গীর খান চৌধুরী মাঠে নেমেছেন ব্যারিস্টার সোহরাব খান চৌধুরীকে নিয়ে। তার সমর্থিত কয়েকজন নেতার সঙ্গে আলোচনা করে জানা যায়, ব্যারিস্টার সোহরাব খান চৌধুরী দীর্ঘদিন যাবত এমপি নির্বাচন করার জন্য প্রচারণা চালিয়েছেন। তার ব্যক্তিগত এবং পারিবারিক ঐতিহ্য ও আর্থিক সক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে আগামী নির্বাচনে বিজয়ী হতে চায়। নির্বাচনে বিএনপি’র ৪ প্রার্থী (চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান) নির্বাচন করায় জাহাঙ্গীর সমর্থকরা মনে করছেন এটা আবু তৈয়ব অপির ভোট ব্যাংকে সমস্যা হবে। নির্বাচনের পর বিপরীত গ্রুপ থেকে অনেক নেতা আসায় তাহের গ্রুপের অনেক নেতারাই ক্ষুব্ধ। পাওয়া না পাওয়ার বেদনায় আবার নিজেদের মধ্যে গ্রুপিং এ বিষয়ও সুবিধা পাবেন জাহাঙ্গীর খান চৌধুরী সমর্থিত ব্যারিস্টার সোহরাব খান চৌধুরী। উভয় গ্রুপই চাচ্ছে বিজয়ী হতে। এই নির্বাচনের মাধ্যমেই স্থায়ীত্ব হবে গ্রুপিং রাজনীতির। আবার বিনাশও হতে পারে। বিশেষ করে পর পর ৩ বার পরাজিত হওয়ার পর ঘুরে দাঁড়াতে পারবে কি জাহাঙ্গীর খান চৌধুরী? নাকি
আবু তাহের গ্রুপই বিজয়ের মাধ্যমে তাদের অবস্থান সুসংহত করবে। সেটাই এখন আলোচনার বিষয়। তাহের গ্রুপ বিজয়ী হলে আওয়ামীলীগ তাদের একক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারবে বলে জানা যায়। এদিকে আমিনুল ইসলাম সুজন প্রার্থী হিসেবে থাকলেও তার সঙ্গে তাহের গ্রুপের যোগাযোগ রয়েছে। কৌশলগত কারণেই আমিনুল ইসলাম সুজন প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন বলে জানা যায়। অপরদিকে বিএনপি’র প্রার্থী হিসেবে সরকার জহিরুল হক মিঠুন প্রচারণা চালাচ্ছেন।
তাছাড়া মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে ৩ জন বিএনপি’র প্রার্থী থাকায় এখনও আলোচনায় আছেন বিএনপি’র প্রার্থী। বিএনপি’র প্রার্থী ধীর প্রচারণায় নেতাকর্মীরা হতাশও হচ্ছেন। বিশেষ করে চার নেতাকে বহিস্কারের পর অনেক নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে প্রচারণায় আসছেন না। ধীরলয়ে সরকার জহিরুল হক মিঠুনের প্রচারণার বিষয়ে তার নেতাকর্মীরা বলেন, আমরা প্রস্তুত। তবে দলীয় সিদ্ধান্তের কারণে আমরা একটু নিরব। প্রার্থীও প্রচারণা জোরদার করবেন ২০ তারিখের পর থেকে। তবে বিএনপি নেতাদের গতিবিধিও নির্ভর করছে কে হবেন উপজেলা চেয়ারম্যান। আপাত দৃষ্টিতে আবু তৈয়ব অপি প্রচার প্রচারণা ও আলোচনায় এগিয়ে আছেন বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করেন।