November 24, 2024

চৌদ্দগ্রামে চোর সন্দেহে মানসিক প্রতিবন্ধীকে নৃশংস নির্যাতন

0
সংবাদ শেয়ার করুন

চৌদ্দগ্রাম প্রতিনিধি:
নাম আলমগীর হোসেন। বয়স ১৫ বছর। মানসিক প্রতিবন্ধী কিশোর। বাবার মৃত্যুর পর নানার বাড়ীতেই থাকেন। সড়ক দুর্ঘটনায় মমতাময়ী মা রোকেয়া বেগমও হারিয়েছেন মানসিক ভারসাম্য। নাড়ী ছেড়া ধন একমাত্র ছেলে আলমগীরের সুখ-দুঃখ বোঝার সক্ষমতাও নেই তার। কারো প্রতি নেই কোনো মায়া-মমতা ও অভিযোগ-অনুযোগ। মায়ের অনুপস্থিতিতে অযতেœ অবহেলায় বেড়ে উঠা আলমগীর ছেড়া পোশাকেই মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে তাদের দেওয়া খাবারেই ক্ষুধা নিবারণ করেন।

অথচ এমন মানসিক প্রতিবন্ধী কিশোর আলমগীরকেই স্থানীয় কিছু যুবক রোববার সন্ধ্যায় মোবাইল চুরির অপরাধে আটকে রেখে নৃশংসভাবে শারীরিক নির্যাতন করেছে। অমানবিক এ নির্যাতনে স্থানীয় যুবক রাহুল, রবিন, বাপ্পি, হৃদয়, দিদার, আলম ও সানাউল্লাহর নেতৃত্বে অংশগ্রহণ করেন আরো কতিপয় বখাটে যুবক। সন্ধ্যা থেকে রাত দুপুর পর্যন্ত চলে এ নির্যাতন। হাতের কাছে যে যা পেয়েছেন তাতেই চালিয়েছেন নির্যাতনের নির্মমতা। লাঠি, লোহার ররে বাড়ি, বেত্রাঘাত, কিল-ঘুষি ও লাথি-উষ্ঠা মেরেই ক্ষান্ত হননি তারা। একপর্যায়ে জোরপূর্বক চুরির স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য তার সমস্ত শরীরে দেওয়া হয়েছে দিয়াশলাই এর আগুন ও জ্বলন্ত সিগারেটের ছ্যাকা। এতে তার পিঠ সহ শরীরের প্রায় প্রতিটি জায়গায় তৈরী হয়েছে ক্ষত। টাটকা এ ক্ষত দেখলেই নির্যাতনের গভীরতা বুঝা যায় খুব সহজে। এমন নির্যাতনের লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন নির্যাতনের শিকার প্রতিবন্ধী ওই কিশোরের বৃদ্ধ নানা আব্দুল কুদ্দুস। নাতির সাথে ঘটে যাওয়া নির্যাতনের এ ঘটনার বিচার চেয়ে সোমবার বিকালে চৌদ্দগ্রাম থানায় একটি লিখিত অভিযোগ (এসডিআর নং-২০৮৯/২৪) দায়ের করেন তিনি।

থানায় দায়েরকৃত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, মোবাইল চুরির অভিযোগে আটকে রেখে আলমগীর হোসেন (১৫) নামে এক মানসিক প্রতিবন্ধীকে রোববার সন্ধ্যার পর থেকে দফায় দফায় নির্যাতন করেন স্থানীয় কতিপয় যুবক। নির্যাতন শেষে তাকে বেওয়ারিশ দেখিয়ে ফেনী সদর হাসপাতালে গোপনে ভর্তি করিয়ে চলে আসেন তারা। নির্যাতনের শিকার ওই কিশোর উপজেলার আলকরা ইউনিয়নের ভাজনকরা গ্রামের মৃত খোকন মিয়ার ছেলে। বাবার মৃত্যুর পর নানার বাড়ীতেই বড় হয়েছে সে। ঘটনাটি ঘটেছে একই ইউনিয়নের ভাজনকরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে। লোক মারফত সংবাদ পেয়ে সোমবার সকালে ফেনী সদর হাসপাতাল থেকে তাকে উদ্ধার করে চৌদ্দগ্রাম স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে পরিবারের লোকজন। চিকিৎসা শেষে ভুক্তভোগির নানা আব্দুল কুদ্দুস পাঁচজনের নাম উল্লেখ সহ অজ্ঞাতনামা আরো ৪/৫ জনের বিরুদ্ধে চৌদ্দগ্রাম থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

অভিযুক্ত রাহুল জানান, ‘আমার সাথে তার কোনো শত্রুতা নেই। ওর বিরুদ্ধে এলাকার অনেকেই চুরির অভিযোগের কথা বলতে শোনা গেছে। তাকে ধরে এলাকার সবাই স্বীকারোক্তি নেওয়ার জন্য মারধর করেছে। আমি না শুধু এ ঘটনায় এলাকার অনেকেই ছিলো।’

এ ব্যাপারে আলকরা ইউপি চেয়ারম্যান মাইনউদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, ‘নির্যাতিত কিশোরকে নিয়ে তার নানা ও পরিবারের লোকজন আমার কাছে এসেছিলো। আমি তাদেরকে ছেলেটির চিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য বলেছি। এ ব্যাপারে আইনী সহায়তা গ্রহণের জন্য তাদেরকে পরামর্শ দিয়েছি।’

এ বিষয়ে চৌদ্দগ্রাম থানার সেকেন্ড অফিসার উপ-পরিদর্শক মো: আলমগীর হোসেন বলেন, ‘ভুক্তভোগি কিশোরের নানা অভিযোগ দিয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে।’

এ বিষয়ে চৌদ্দগ্রাম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ত্রিনাথ সাহা বলেন, ‘প্রতিবন্ধী কিশোরকে নির্যাতনের বিষয়ে তার নানা থানায় অভিযোগ দিয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষ দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *