September 29, 2024

উষ্ণতার বিরূপেই ভারি বৃষ্টি

0
সংবাদ শেয়ার করুন

‘বর্তমান র‌্যাপিড অনসেট’ বৃষ্টিপাত বা ‘হাই ইমপেক্ট রেইনফল’ দ্রুত সূচনা হওয়া অপ্রীতিকর পরিস্থিতি হিসাবে
বিবেচিত। এ ধরনের বৃষ্টিপাত অস্থায়ীভাবে জলাবদ্ধতা পরিমাণ বাড়িয়ে দিচ্ছে। স্বল্প সময়ে বন্যা পরিস্থিতির উদ্ভব
হচ্ছে। দেশে আগে এমন অবস্থা খুব একটা পরিলক্ষিত হত না। বৈশি^ক উষ্ণতার কারণে দেশের আবহাওয়া ও
জলবায়ুতে ব্যাপক অবস্থার পরিবর্তন এসেছে। এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে মৌসুমি বৃষ্টিতেও। এতে অল্প সময়ে ভারি
বৃষ্টিপাতের আশংকা বেড়েছে। স্বল্প সময়ের মধ্যেই রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টি হচ্ছে।
সম্প্রতি বিশে^র অনেক দেশেই এ বৃষ্টিপাতে আকষ্মিক বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু সে সব দেশের
আবহাওয়াবিদরাও কি পরিমাণ বৃষ্টি হবে তার বিষয়ে পূর্বাভাস দিতে পারেনি। আবহাওয়া অফিসের বিশ্লেষণে দেখা
যায়, গত এক দশকের বেশি সময়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ৩ থেকে ৬ ঘন্টার মধ্যে ১০০ থেকে ৩০০ মিলিমিটার বা
তার বেশী বৃষ্টির রেকর্ড পাওয়া যায়। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে চীন, ব্রাজিল, দুবাই, সৌদি
আরবেরও সাময়িক বন্যার অন্যতম কারণ এ ধরনের বৃষ্টি।
সিলেট বা তার পাশর্^বর্তী এলাকায় ভারি বৃষ্টিপাত হবে এটা আমরা বলতে পারি কিন্তু নিউমারিক ভেন্যুতে সেই
বৃষ্টিপাত ১০০, ২০০, ৩০০ বা ৪০০ মিলিমিটার হবে সেটি বলা সম্ভব নয়। জানা গেছে, বাংলাদেশ আবহাওয়া
অধিদপ্তরের ঝড় সতর্ককরণ বিষয়ক আবহাওয়া বিজ্ঞানীরা স্থান ও সময় নির্ভর পূর্বাভাস সঠিকভাবে দেয়ার জন্য
নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। নিজস্ব সক্ষমতা বৃদ্ধির কারণে তারা বর্তমানে কোথায় কখন কি ধরনের আবহাওয়ার
পরিবর্তন হবে তার পূর্বাভাস দেয়ার ব্যাপারে এখনও নানাহ পরিক্ষা-নিরীক্ষা চলছে।
বৃষ্টিপাতের কারণে হঠাৎ বন্যার সৃষ্টি হচ্ছে। দেশে হঠাৎ বন্যার জন্য ভারি বৃষ্টির পাশাপাশি উজানের বৃষ্টিপাতও
দায়ী। সাধারণ ভারি বৃষ্টিপাতের আগে ৩-৪ দিন ছোট ছোট বৃষ্টিপাত হয় এর ফলে স্থানীয় জলাধারগুলো পরিপূর্ণ হয়ে
যায়। পরবর্তী সময়ে হঠাৎ ভারি বৃষ্টিপাত হলে সেই পানি কোন আধার না পেয়ে আটকে যায়। আকষ্মিক বন্যার সৃষ্টি
হয়। সে কারণে ভারী বৃষ্টিপাতের আগে কয়েকদিন ধরে হওয়া ছোট ছোট বৃষ্টিপাত গুরুত্ব সহকারে নিতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দ্রুত নগরায়নের কারণে বর্ষা মৌসুমে হঠাৎ ভারি বৃষ্টির কারণে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হলেও পানি
দ্রুত সরে যাওয়ার অবস্থা থাকে না। দেশের নদ-নদীগুলোর নাব্যতার ঘাটতিও অনেক। বাংলাদেশ ক্রমশ ঢালু।
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উত্তর দিকে গেলে উচ্চতা বৃদ্ধি পেতে থাকে। সেক্ষেত্রে কুশিয়ারা, সুরমা ও ব্রক্ষ্মপুত্রের অববাহিকায়
বৃষ্টি হলে সে বৃষ্টির পানি নদীতে প্রবাহিত হয় অথবা ভূ-ভাগের উপর দিয়ে গড়িয়ে নেমে আসে। একইভাবে আসাম,
মেঘালয়, ত্রিপুরা, নাগাল্যান্ড, অরুনাচল এসব অঞ্চলে বৃষ্টিপাত হলে কুশিয়ারা, সুরমা বা ভূ-ভাগ দিয়ে গড়িয়ে পাহাড়ী
ঢল আকারে নেমে এসে অস্থায়ীভাবে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করে। এতে ক্রমশ নদীর পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত
হয়। দেশের নদীগুলোর নাব্যতা ও স্রোত ঠিক থাকলে এ পানি সাধারণ প্রবাহে বঙ্গোপসাগরে গিয়ে পড়ত। কিন্তু নানাহ
সমস্যা, নদী খনন না হওয়া, খাল দখল হওয়া ও খনন না করা, পুকুর হাওরের মত প্রাকৃতিক আধারগুলি গভীরতা
হৃাস পাওয়ার কারণে বা দ্রুত নগরায়নের ফলে স্বাভাবিকভাবে পানি বেরিয়ে যাওয়া বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। বিজ্ঞজনেরা আরও
বলেছেন, ভারি বৃষ্টিপাতে যে বন্যা হয় তার অনেককিছু আমলে নেয়া হয় না।
পুকুর হাওড়গুলোকে তার প্রাকৃতিক রূপে রাখতে হবে। দখল বা ভরাট করা যাবে না। হঠাৎ বন্যার পানি বের
হওয়ার প্রাকৃতিক যে প্রবাহ সেটি অক্ষুন্ন রাখতে হবে। দেশে অনেক সাইক্লোন শেল্টার দেখা যায় কিন্তু বন্যার জন্য
কোন শেল্টার নাই। বন্যাপ্রবন এলাকার জন্য বন্যা শেল্টার তৈরি করতে হবে। গবাদিপশু নিরাপদ উঁচু স্থানে রাখার
ব্যবস্থা করতে হবে। হঠাৎ বন্যা থেকে পরিত্রাণের জন্য খাল খনন, নদী খনন, নদীর নাব্যতা বাড়ানো, বিজ্ঞানসম্মত
নগরায়নের পাশাপাশি পানি ধরে রাখার আধার খনন করতে হবে। এক্ষেত্রে পাহাড়ি ঢল এলে সিলেট অঞ্চলসহ
বন্যাপ্রবন এলাকার পতিত জমিতে জলাধার তৈরি করতে হবে। এটি করা গেলে পাহাড়ি ঢলের পানির গতি অনেক
কমে আসবে। পরে এ ধরে রাখা পানি সেচের কাজে ব্যবহার সম্ভব হবে। মনে রাখতে হবে, অস্থায়ী জলাবদ্ধতাও
বন্যার একটি বিশিষ্ট কারণ। বৈশি^ক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে দেশের আবহাওয়া ও জলবায়ুতে যে ব্যাপক পরিবর্তন
এসেছে এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে মৌসুমি বৃষ্টিপাতেও।
সিলেটে বন্যা পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হচ্ছে। কয়েকদিন ধরে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। এ বৃষ্টির পরিমাণ কোথাও ভারি
কোথাও মাঝারি থেকে হালকা। আগামী সপ্তাহের শেষের দিকে বৃষ্টির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন


আবহাওয়া পরিদপ্তর। শুক্রবার (০৫.০৭.২৪ ইং) আগামী ৫ দিনের দেয়া পূর্বাভাসে আবহাওয়া অফিস জানায়, সিলেট
বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি, বজ্রসহ বৃষ্টি হচ্ছে।
সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের, ভারি থেকে অতিভারি বৃষ্টি হতে পারে। জলমগ্ন হয়ে আছে
নগরীর উপশহর ও দক্ষিণ সুরমা সরকারি কলেজসহ গোটা এলাকা। অন্যদিকে দেশের উত্তরের জেলা কুড়িগ্রাম,
লালমনির হাট, সিরাজগঞ্ছে বন্যার পাশাপাশি দেখা দিয়েছে তীব্র নদীভাঙ্গন। মুহূর্তেই নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে স্বপ্নের
ভিটে বাড়ী। নিঃস্ব হয়ে পড়ছেন মানুষজন। সামগ্রীকভাবে উদ্ভুত পরিস্থিতির শিকার সকল অসহায় জনগনের পাশে
ত্রান মন্ত্রনালয় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিবে এটাই জনগণের চাহিদা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *