December 27, 2024

সূচনা মেয়র পদ হারানোয় কুমিল্লা নগরীতে আনন্দ

0
সংবাদ শেয়ার করুন

কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র তাহসীন বাহার সূচনাকে অপসারণ করা হয়েছে।  আজ সোমবার (১৯ আগস্ট) স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত দুটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এতে কুমিল্লা নগরীতে বইছে আনন্দের বন্যা।
ওই প্রজ্ঞাপনে  দেশের ১২টি সিটি করপোরেশনের মেয়রকে অপসারণ করা হয়েছে। তাদের অপসারণের পর প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাহসীন বাহার সূচনা উপনির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর ঠিকমতো কাজ গুছিয়ে উঠতে পারেননি। মাত্র পাঁচ মাস আগে উপনির্বাচনে বিজয়ী হয়ে শপথ নিয়েছিলেন কুমিল্লা সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আ ক ম বাহা উদ্দিন বাহারের বড় মেয়ে ডা. তাহসীন বাহার সূচনা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীদের বিপক্ষে তাহসীন বাহার সূচনার নেতিবাচক ভূমিকা নিয়ে নগরজুড়ে আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়। এরপর স্বৈরাচার শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যাওয়ায় মুখ খুলছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। 
গত ৪ আগস্ট কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার কোটবাড়ি বিশ্বরোড এলাকায় ২২ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর রামপুরের শাহিন মিয়ার ছেলে মাসুম মিয়াকে আওয়ামী লীগের লোকজন কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে। গতকাল রোববার রাতে এ ঘটনায় সাবেক সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার ও তাঁর মেয়ে সাবেক মেয়র তাহসীন বাহার সূচনাসহ ৬২ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ৪০০ জনকে অজ্ঞাতপরিচয় করে একটি হত্যা মামলা করা হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা জানান, তাহসীন বাহার সূচনা প্রথম থেকেই ছাত্র আন্দোলনের বিরোধিতা করে তাঁর ফেসবুক থেকে বিভিন্ন লেখা পোস্ট করেছেন।
গত ১৮ জুলাই কোটবাড়ি বিশ্বরোড এলাকায় শিক্ষার্থী-পুলিশ সংঘর্ষে শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। ওই দিন বিকেলে সূচনা পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী এবং আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে কোটবাড়িতে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া করেন।
এরপর বিভিন্ন সময়ে নগরীর পূবালী চত্বরসহ যেখানেই শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করতে গিয়েছিল সেখানেই তাঁর অনুসারীরা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বেধড়ক পিটিয়েছে। জিলা স্কুলের একাধিক সাবেক শিক্ষার্থী জানান, গত ১৫ জুলাই সন্ধ্যায় তাহসীন বাহার সূচনার অনুসারী হিসেবে পরিচিত মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি নুর মোহাম্মদ সোহেল এবং সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন মুনের নেতৃত্বে আন্দোলনকারী এক শিক্ষার্থীকে জিলা স্কুলের মাঠে নিয়ে ফটক বন্ধ করে বেধড়ক পিটুনি দেয়। এ সময় খবর পেয়ে কোতোয়ালি মডেল থানার পুলিশ আহত শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করে।
এরপর শিক্ষার্থীরা গত ২ আগস্ট জুমার নামাজের পর পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচিতে নগরীর ঝাউতলা ছাতা মসজিদ এলাকায় জড়ো হন। পরে তাঁরা একটি মিছিল বের করেন। মিছিলটি রেসকোর্স এলাকায় গেলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ধাওয়া দিয়ে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
৪ অগাস্ট সকাল থেকে কুমিল্লা জিলা স্কুল ও নগরীর পূবালী চত্বরে জড়ো হয় শিক্ষার্থীরা। দুপুরে জেলা প্রশাসনের আশ্বাসে জড়ো হওয়া শিক্ষার্থীরা জিলা স্কুল সার্কিট হাউজ হয়ে ফৌজদারি মোড়ে যায়। সেখান থেকে পুলিশ লাইন্স হয়ে শাসনগাছা গিয়ে শেষ করবে মিছিল। তবে মিছিলটি পুলিশ লাইন্স পৌছালে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মুহুর্মুহু গুলি করে। বাঁশের লাঠি, হকিস্টিক ও লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটায়। এ সময় আহত শিক্ষার্থীদের হাসপাতালে নিতেও বাধা দেয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
একাধিক সমন্বয়ক জানান, তাহসীন বাহার সূচনার নির্দেশে তাঁর দলের নেতাকর্মীরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর এমন নির্মম হামলা করে।
এ বিষয়ে কুমিল্লা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব ইউসুফ মোল্লা টিপু বলেন, সূচনা নগরবাসীর ভোটে পাস করেননি। তিনি জোর করে ভোট দিয়ে পাস করেছেন। ৫০টি ভোট বাক্সে পড়েছে। বাকি ভোটগুলো দলীয় নেতাকর্মীদের দিয়ে বাক্স ভরেছেন। এগুলো কুমিল্লাবাসী জানে।  তাঁর বাবা সাবেক সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দীন বাহার কুমিল্লায় নারকীয় অবস্থা সৃষ্টি করেছে। শপথ নেয়ার পর বিভিন্ন অবৈধ  ভবনের মালিকদের ডেকে নিয়ে টাকার বিনিময়ে সব ম্যানেজ করেছেন। তিনি দলীয় লোকজন ছাড়া কারও সঙ্গে দেখা করতেন না। তাঁর কাছে যেতে হলে অন্তত তিনটি ধাপ পার হয়ে যেতে হতো। আজ তাকে তার দায়িত্ব থেকে অপসারণে নগরবাসী সত্যিই আনন্দিত। 
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং ১৩ ব্যাচের শিক্ষার্থী জান্নাতুল ইভা জানান, যখন আন্দোলন চলছিল তখন তাহসীন বাহার সূচনা শিক্ষার্থীদের বিপক্ষে অবস্থান নেন। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কয়েকজন শিক্ষার্থীকে মহানগর আওয়ামী লীগ অফিসে আটকে রাখে। তখন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক আটক শিক্ষার্থীদের ছাড়িয়ে আনতে গেলে সূচনা উদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন। নারী উদ্যোক্তা গ্রুপের সবাইকে নিষেধ করে দেয় কেউ যেন শিক্ষার্থীদের পাশে না থাকে। পাশাপাশি কুমিল্লার সোশ্যাল মিডিয়াতে অনেকগুলো গ্রুপ আছে। সেখানেও আমাদের লেখা অ্যাপ্রুভ করত না। 
ইভা আরও জানান, সূচনা তাঁর কর্মকাণ্ডেই কুমিল্লায় বিতর্কিত হয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *