December 4, 2024

কুমিল্লায় বন্ধ ৮ রেল স্টেশনআধুনিকায়ন করলেও চালু হয়নি ৪টি ষ্টেশন

0
সংবাদ শেয়ার করুন

নিজস্ব প্রতিবেদক
একে একে বন্ধ হচ্ছে স্টেশন। বন্ধ স্টেশনের আশপাশ দখল করে গড়ে উঠছে ব্যবসা-বাণিজ্য। একসময়ের এই জনপদের ব্যবসা-বাণিজ্য এবং যাত্রী পরিবহনে পছন্দের বাহন ছিল রেল। গত কয়েক বছরে কুমিল্লা অঞ্চলের লাকসাম থেকে নোয়াখালী, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম ও আখাউড়া রেলপথে ১৭ স্টেশন বন্ধ হয়ে পড়ে। এর মধ্যে কুমিল্লা জেলায় বন্ধ ৮টি। ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের পাঁচটিকে আধুনিকায়ন করা হলেও ধুঁকছে জনবল সংকটে। তবে রেল পূর্বাঞ্চল বলছে জনবল সংকট কাটিয়ে দ্রুত চালু করবেন স্টেশনগুলো।
গত দেড় দশকে কুমিল্লা অঞ্চলে ১৭টি রেল স্টেশন বন্ধ হয়ে আছে। স্টেশনগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ওই এলাকার যাত্রীরা দুর্ভোগে পড়েছেন। বন্ধ স্টেশন এলাকা পরিত্যক্ত ভবনে পরিণত হয়েছে। এসব স্টেশনে জনবল না থাকায় নিয়মিত মাদকসেবীদের আড্ডা বসে।
কুমিল্লা অঞ্চলের বন্ধ স্টেশনগুলো হল, লাকসাম-নোয়াখালী রেল সড়কের কুমিল্লার দৌলতগঞ্জ, খিলা ও বিপুলাসার। নোয়াখালীর বজরা, মাইজদী ও হরিনারায়ণপুর। লাকসাম-চাঁদপুর রেল সড়কের কুমিল্লার চিতোষী, চাঁদপুরের শাহরাস্তি, উয়ারুক, বলাখাল, মধু রোড, শাহতলী ও মৈশাদী স্টেশন বন্ধ রয়েছে। কুমিল্লা-চট্টগ্রাম রেল সড়কের কুমিল্লার নাওটি, আলীশ্বর, লালমাই ও ময়নামতি। এ ষ্টেশনগুলো আধুনিকায়ন করা হলেও থামেনা কোন রেল। একজন করে দাড়োয়ান ছাড়া নেই কোন স্টাফ।
এক সময়ের বানিজ্যিক ব্যাস্ততম এলাকা ছিলো কুমিল্লার লাকসাম দৌলতগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন। মালামাল ও যাত্রী উঠানামায় দিনরাত সরগরম থাকা এক সময়ের দৌলতগঞ্জ স্টেশনের সব কক্ষে এখন ঝুলছে তালা। স্টেশনের এমন ভগ্নদশায় ক্ষুব্ধ যাত্রীরা দায়ী করছে রেলওয়েকে। এ ষ্টেশন থেকে মাত্র একটি ট্রেন থামে।
এদিকে, লাকসাম-নোয়াখালী এ রেলপথের নাথেরপেটুয়া রেলওয়ে স্টেশনটিও বন্ধ হওয়ার পথে। প্ল্যাটফর্ম দখলে নিচ্ছে মার্কেট কিংবা খাবার হোটেলসহ নানান ব্যবসা। উপকূল এক্সপ্রেস নামে দিনে একটি আন্তঃনগর ট্রেন চালু থাকলেও নেই টিকিটিং ব্যবস্থা। বিনাটিকিটেই রেল চড়ছেন যাত্রীরা। এ পথের দশটি স্টেশনেরই প্রায় একই অবস্থা। ট্রেন সংকটেই একে একে বন্ধ হচ্ছে স্টেশনগুলো।
কুমিল্লা অঞ্চলে বন্ধ হওয়া ১৭টি রেল স্টেশনে লোকাল কিংবা আন্তঃনগর কোন ট্রেনরেই যাত্রা বিরতি নেই। দৃষ্টিনন্দন ময়নামতি রেলওয়ে স্টেশন। এ স্টেশন নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১০ কোটি টাকা। নির্মাণের ছয় বছরেও যাত্রী সেবায় আসতে না পারায় পরিণত হচ্ছে পরিত্যক্ত ভবনে। একই দশা ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের নবনির্মিত দৃষ্টিনন্দন লালমাই, আলীশ্বর ও নাওটি স্টেশনেরও।
মানবাধিকার কর্মী, আলী আকবর মাসুম জানান, কুমিল্লা অঞ্চলের ছোট বড় প্রায় ষ্টেশনেই যাত্রী রয়েছে। ট্রেন ও লোকবল না থাকার করেনে এসব ষ্টেশন বন্ধ করা হয়েছে। আশা করি বিদ্যমান সংকট নিরসন শেষে দ্রুতই স্টেশনগুলো চালু করবেন কর্তৃপক্ষ।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক লাকসাম রেল ষ্টেশনের এক রেল কর্মকর্তা জানান, বন্ধ হওয়া ষ্টেশনগুলো বানিজ্যিক নির্ভর নয়,যাত্রী নির্ভর। এ ষ্টেশনগুলো বানিজ্যিকভাবে লাভবান না হওয়া ও লোকবল সংকটের কারনে বন্ধ রয়েছে। অনেক ষ্টেশনে ৫লাখ টাকার উপরে ব্যয় থাকলেও ষ্টেশন চালু না হওয়ায় লোকসান হচ্ছে। ভোগান্তিতে পড়েছে যাত্রীরা।
রেলওয়ে কুমিল্লার ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী (পথ), লিয়াকত আলী মজুমদার জানান, জনবল ও ট্রেন সংকটের কারনে লাকসাম থেকে চাঁদপুর ও নোয়াখালী রেলপথের স্টেশন বন্ধ রয়েছে। দেশে নতুন ইঞ্জিন আসলেই ট্রেন ও জনবল সংকট কাটিয়ে আবারো চালু হবে বন্ধ স্টেশনগুলো।
একইসঙ্গে যাত্রী ভোগান্তি কমাতে চাঁদপুর ও নোয়াখালী রেলপথের জরাজীর্ণ স্টেশনগুলোকেও সংস্কারের মাধ্যমে ঢেলে সাজানোর দাবি যাত্রীদের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *